Best Jobs Preparations world

Video of the Day

Wednesday, February 10, 2016

ব্যাংকার হবেন? আরেকবার ভালো করে ভাবুন!-রিপন অাবু হাসনাত

দেশের চাকরির বাজার খুব সীমিত। এই সময়ের অন্যতম চাহিদাপূর্ণ একটি পেশার নাম ব্যাংকার। সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে এখন দেশে অর্ধশতাধিক ব্যাংক রয়েছে। এসব ব্যাংকের কার্যক্রম চালিয়ে নেয়ার জন্য প্রতিনিয়ত প্রয়োজন হচ্ছে নতুন নতুন জনবল। ব্যাংকগুলো তাদের কার্যক্রমকে প্রসারিত করে যাচ্ছে বিভাগীয় শহরগুলোর গন্ডি পেরিয়ে জেলা, থানা এবং এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়েও। তাই বাড়তি জনবলের প্রয়োজনও বেড়েই চলেছে দিনের পর দিন। ভালো পরিমাণে বেতন আর বাড়তি সুযোগ সুবিধা নিয়ে এখন ব্যাংকিং হয়ে উঠেছে সময়ের সাথে তালমিলিয়ে চলার পেশা। আকর্ষণীয় বেতন, সামাজিক সম্মান, ক্যারিয়ারে দ্রুত এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ এই সবকিছু যে গুটিকতক পেশায় মেলে; ব্যাংকিং তার মধ্যে একটি। আজকের দিনের তরুণ পেশাজীবীদের কাছে ব্যাংকিং পেশাটি ক্রমেই পরিণত হয়েছে আকর্ষণীয় ও চ্যালেঞ্জিং একটি পেশায়। 

তবে এখন ব্যাংকিংএ যে পরিমাণ অবশ্য পালনীয় প্রত্যয় যুক্ত হয়েছে তা এই পেশাটাকে পালকহীন ময়ুরে পরিণত করেছে। আর একেকজন ব্যাংকারকে করেছে মানবীয় অনুভুতিহীন যন্ত্র প্রাণীতে। তাই যারা ব্যাংকিং জবে আসতে চান তাদের বলছি-এ পেশায় আসার আগে আরেকবার ভাবুন।

একজন ব্যাংকার সকাল ৯টায় ব্যাংকে ঢুকে রাত ৮টার আগে কখনই বের হতে পারেনা। দিনের আলো দেখার সৌভাগ্যে ব্যাংকারের হয় না। বিকেলের সূর্যের আলো হয়ত সপ্তাহে একদিন দেখতে পায়। কারন শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলেও প্রায় শনিবার অর্ধবেলা অফিস করতে হয়.। কতো কঠোর পরিশ্রমে তাদের দিন কেটে যায়, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ঠিক সময়ে খেতে পারে না, নামাজ পড়তে পারে না, ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে ভাবতে পারে না, কোনো জরুরি কাজে বের হতে পারে না। সারাক্ষণ শুধু কাজ আর কাজ। দিনের পুরো সময় কাজের মধ্যে ডুবে থাকতে হয় তাদের। ৩৫ বছর বয়সেই একজন ব্যাংকার হয়ে উঠেন হাইপ্রেসারের রোগি, রক্তে কোলেস্টেরল এর পরিমান অনেক বেশি. ডাক্তার সকাল বিকাল হাটতে বলেছে কিন্তু সময় পাবে কোথায়?। ডায়াবেটিসও হয়ত আক্রমন করবে দ্রুত। কারন ব্যায়াম/ শারিরীক পরিশ্রম না করার কারনে ওজন বাড়ছে দ্রুত। ব্যাংকারদের নেই কোন ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবন। যাই হোক ব্যাংকারদের দুর্দশা অসীম হলেও তা বলার লোক খুবই সীমিত..। 

কাগজে কলমের ছুটি
প্রত্যেক পেশাতেই কিছু দায়িত্ব-কর্তব্য থাকে, থাকে অবকাশও। ব্যাংকিং পেশায় প্রথমটা আছে শুধু, পরেরটা নেই। দেশের কোথাও নির্বাচন? তার ক’দিন আগে প্রার্থীদের জামানতের টাকা জমাদানের সুবিধার্থে ছুটির দিনেও খোলা রাখতে হবে ব্যাংক। ছুটির দিনে সামাজিক কোন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করবে বলে সব আয়োজন সম্পন্ন করে ফেলেছে কেউ। হঠাৎ আগের দিন চিঠি এসে পড়ল, করদাতাদের সুবিধার্থে আগামীকাল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। কিছুই আর করার থাকেনা তখন। ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে যে কাঁদবে, সে বয়স তো আর নেই। কিন্তু তার ভেতরটা যে এর থেকেও বেশি কেঁদে চলছে সে কথাও তিনি কিছুতেই কাউকে বোঝাতে পারেন না। নিরুপায় আক্রোশে তিনি ফেটে পড়বেন শুধু। সেটা তার মানসিক দহন বাড়িয়ে দেয়, বাড়িয়ে দেয় মনের গহীনের যন্ত্রনা যা প্রশমন হয় না কখনো।

ব্যাংকারদের যে ছুটি, তা কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাগজে কলমের। সবার ক্ষেত্রে না হলেও অনেকেই তার নৈমিত্তিক ছুটিটাই (ঈধংঁধষ খবধাব) পুরোপুরি ভোগ করতে পারে না। আর বিশেষাধিকার ছুটি (চৎরারষবমব খবধাব) তো এক অলীক স্বপ্নের নাম। ইদানিং বাধ্যতামূলক ছুটি (ঈড়সঢ়ঁষংড়ৎু খবধাব) নামে একটা ছুটি যোগ হয়েছ বটে কিন্তু সেটা যে কি জিনিস তা অধিকাংশ ব্যাংকারই বুঝতে পারেননি। কারণ, তারা এ ছুটিটা ভোগ করার সুযোগ পাননি।
অনেকেই ব্যাংকারদের ব্যাংক হলিডের কথা বলে থাকেন। ব্যাংকে যোগ দেবার আগে কেউ কেউ এই ছুটিটা নিয়ে উত্তেজিত বা গর্ববোধও করেন। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। এটা আসলে আগের হলিডে থেকে এ হলিডে পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ আর গ্রাহকদের সীমাহীন যন্ত্রণাদায়ক চাপ কাটিয়ে নতুন করে প্রস্তুতি নেবার একটা গোজামিলের প্রক্রিয়া মাত্র। সেদিনও ব্যাংকারকে নিয়ম  মতো অফিসে এসে বিগত দিনের খতিয়ান সমন্বয় করতে হয়। সব মিলিয়ে এটা আসলে একটা প্রহসন ছাড়া আর কিছুই নয়।

উপহাসের উৎসবঃ
সারাদিন ব্যাংকিং করে ক্লান্তি আর অবসাদ দিনের শেষে ব্যাংকারের সঙ্গী। রমজান কিংবা কোরবানীর ঈদ। গরুর বাজারে একজন ব্যাংকারের ডিউটি পড়ে জাল নোট চেক করার। অথচ, নিরীহ ব্যাংকারটি মনে মনে ভাবছিলেন ঈদের ছুটিতে যথাসময়ে বাড়ি ফিরবেন। কিন্তু সে কপাল কি তার আছে? নেই। কারন, তিনি একজন ব্যাংকার। ঈদে গ্রামের বাড়িতে যাবেন বলে ঈদের আগের দিনের টিকেট কেটে রেখেছেন অনেকে। হঠাৎ বাংলাদেশ ব্যাংকের আদেশ এল ওই দিনও জনস্বার্থে তাকে অফিস করতে হবে। তখন কিছুই করার থাকে না একজন ব্যাংকারের। কষ্টে বুক ফেটে গেলেও মুখে হাসি নিয়েই জনস্বার্থে কাজে ঝাপিয়ে পড়তে হয়। তখন একজন ব্যাংকারকে টিকেট মিস, অর্থ মিস আর মিসেসের হাসি মুখটাও মিস করতে হয়। বেজার মন নিয়ে চাঁদ রাতে সকল ঝক্কি ঝামেলা এড়িয়ে গাড়িতে উঠে ৬ ঘন্টার পথ ২৬ ঘন্টায় পাড়ি দিয়ে যখন গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান,  তখন ঈদগাহ মাঠ থেকে ফেরা আত্মীয় স্বজনদের সাথে ঈদের বাসি কোলাকুলিটা ছাড়া আর কিছুই করার থাকেনা তার। ঈদের নামাজ পড়াতো দুরের কথা, খুব কম ভাগ্যবান ব্যাংকারের কপালে জোটে এটা। কাছের মানুষদের হাসিমুখ হয়তো তাকে কিছুটা তৃপ্ত করতে পারে। কিন্তু পরদিনই ফেরার তাড়াটা সে হাসিমুখটাকেই ম্লান করে দেয়। কারণ, অফিসের কড়াকড়ি নিয়ম আর চাকুরীর বিধি-নিষেধসহ অন্যান্য পরিস্থিতির কারণে তার ছুটিটা কিন্তু তিনি চাইতেই পারেননি। 

বুকে হাত দিয়ে কেউ কি বলতে পারবেন-এত শক্ত সময় সূচির পেশা ব্যাংকিং ছাড়া আর একটা আছে? এটাকে কি জীবন বলে? এমন নিরামিষ জীবন কি কোন সৃষ্টিশীল চিন্তার জন্ম দিতে পারে?
দেহের রক্ত পানি করে যারা দেশের অর্থনীতির গতি সঞ্চালন করে তাদেরকে শুধু মেশিন ভাবাটা অবান্তর এবং নির্দয়ও বটে। প্রচলিত সব সুবিধার যথাযথ কার্যকারিতার পাশাপাশি ব্যাংকারদের জন্য ছুটিটা পুরো সপ্তাহ জুড়ে হওয়া উচিত। হ্যাঁ, ঈদের ছুটিটা তাদের জন্য পুরো সপ্তাহজুড়ে হওয়া উচিত। কারন, সত্যিকার অর্থে ব্যাংকারদের ছুটি বলতে ঈদের ছুটিটাকেই বুঝায়।

ব্যাংকাররাই আজকের খারাপ স্বামী বা পিতা
সপ্তাহের ৫দিন গাধার কাটুনি খাটার পর যখন প্রায়শই শুক্র-শনি বন্ধতেও অফিস করতে হয় তখন সে ব্যাংকার তার স্ত্রীর চোখে হয়ে উঠেন খারাপ স্বামী আর সন্তানের চোখে হয়ে উঠেন খারাপ পিতা। স্ত্রী-সন্তানরা আশা করেন শৃংখলিত ব্যাংকার পেশায় সপ্তাহশেষে স্বামী বা বাবার একটু কাছে থাকার, একটু বেড়াতে যাওয়ার কিংবা কোন পারিবারিক কাজে বের হওয়া। কিন্তু তা আর হয়ে উঠেনা। অনেক ব্যাংকার বাবা তার সন্তানদের সঠিক খোজ খবরটাও রাখতে পারেন না। ব্যাংকারদের কর্মসময় সম্পর্কে এমনও শেখানো হয় যে একজন ভালো ব্যাংকার সব সময়ই খারাপ স্বামী বা পিতা। অর্থাৎ একজন ভালো ব্যাংকারকে সব সময়ই রাত করে ঘরে ফিরতে হবে। যার ফলে, একজন ব্যাংকার তার পরিবারের কাছে হয়ে উঠেন একজন খারাপ স্বামী-পিতা। এর দায় ভার কে নেবে? শাখা ব্যবস্থাপক কিংবা ডিপার্টমেন্ট হেডরা অধীনস্তদেরকে অফিস সময় এবং তাদের কাজ শেষ হয়ে যাবার পরও ঘন্টার পর ঘন্টা বসিয়ে রাখেন। কিন্তু, নির্ধারিত কর্মসময়ের মধ্যে কাজ শেষ করে ঘরে ফেরা যে সত্যিকার দক্ষতার পরিচায়ক, এই সরল সত্যটা অতীতে কিংবা বর্তমান সময়ের মানবসম্পদ উন্নয়নের নতুন ধারণাতেও প্রতিষ্ঠিত করা যায়নি। 

করুণার পাত্র হয়ে বেঁচে থাকা
একজন ব্যাংকার আজকের সমাজ ব্যবস্থায় একজন করুণার পাত্র। বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের হাত পা ধরে অনুরোধ করা যে, ‘ভাই একটা একাউন্ট খুলেন, আমার সামনে প্রমোশন’। ব্যাংক হতে দেয়া আকাশচুম্বী ‘টার্গেট’ অর্জন করতে একজন ব্যাংকারকে যেকোন কাজ করা লাগতে পারে। আর যদি তিনি মহিলা ব্যাংকার হন তবে তাকে হতে হবে হাস্যময়ী, স্মার্ট, কো-অপারেটিভ এবং লিবারাল। প্রতি সপ্তাহে সবাইকে নিয়ে ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মিটিং করবেন যার কমন এজেন্ডা-“আপনি কয়টা একাউন্ট খুলেছেন, কতো ডিপোজিট আনছেন? আপনার বেতন কিভাবে হয় হিসাব রাখেন? প্রতি মাসে ১০টা নতুন একাউন্ট আনবেন। নতুন বিজনেজ আনবেন প্রতি সপ্তাহে। ৭টা বাজলেই আপনারা চলে যেতে যান কেন? ব্যাংকের প্রতি কি আপনাদের সহমর্মিতা নাই? যে প্রতিষ্ঠান আপনার রুটি-রুজির ব্যবস্থা করে, যার টাকায় আপনার পরিবার খেয়ে-পড়ে বাঁচে, তাকে আপনি বাঁচাতে চান না?

কোদাল লাঙ্গল আর মাউসের রাইট-লেপ্ট বাটন ক্লিক
বেসরকারি ব্যাংকের কাজের চেয়ে সরকারি ব্যাংকের কাজে জটিলতা অনেক বেশি। যেখানে বেসরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তারা এয়ারকন্ডিশনের নিচে বসে কম্পিউটারের কীবোর্ড প্রেস করে, মাউসের রাইট বাটন-লেপ্ট বাটন ক্লিক করে। অর্থাৎ প্রযুক্তির সাহায্যে ট্রান্সজেকশন সম্পন্ন করে, সেখানে সরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তারা লেজারের পাতা উল্টিয়ে শরীরে ঘাম ঝরিয়ে, জিহ্বায় ধুলো জমিয়ে ট্রান্সজেকশন সম্পন্ন করে। যা সময় সাপেক্ষ এবং কষ্টসাধ্যতো বটেই। সরকারী ব্যাংকের একজন ব্যাংকার সারাদিন কাজ শেষ করে ক্লান্ত হয়ে যখন বাড়ি ফিরে তখন শুনতে হয় স্ত্রী-সন্তানদের নানা অভিযোগ, আবদার। যা রক্ষা করা একজন সরকারী ব্যাংকারের পক্ষে বেশ কঠিন। বাজারের দ্রব্যমূল্যের সাথে আয়ের কোনো সামঞ্জস্য না থাকায় পরিবার-পরিজনকে নিয়ে বেশ হিমশিম খেতে হয়। তাইতো মেধাবী ব্যাংকাররা চলে যাচ্ছে বেসরকারি ব্যাংকের দিকে। যেখানে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে আরামপ্রদ পরিবেশে, প্রযুক্তির সাহায্যে কাজ করার সুযোগ এবং আছে উচ্চ বেতন প্রাপ্তির সুবিধা। পরিবারকে সময় দিতে না পারলেও আর্থিক প্রয়োজন মিটিয়ে কিছুটা ঠান্ডা রাখা যায়। যদিও চাকরীর নিশ্চয়তা এবং বসের ঝাড়ি-ঝুড়ি নিয়ে তটস্থ থাকতে হয় সবসময়। 

শেষ কথা
ব্যাংকারদের বহুমুখী কর্মপরিধি, ব্যবসায়িক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চেষ্টা এবং কঠোর নিয়মাচার পরিপালনের চাপ কেবল তাঁদের সাময়িক ক্ষতিই করে না, দীর্ঘ মেয়াদে জন্ম দেয় বিভিন্ন ধরনের স্বাস্থ্যগত, মানসিক এবং সামাজিক জটিলতার। ব্যাংকারদের উপর নিপীরণ শুধু বাংলাদেশে নয়, বহিঃবিশ্বেও কম বেশী দেখা যায়। ‘ব্যাংক ওয়ার্কার্স চ্যারিটি’ নামক একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান তাদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, ৬০ শতাংশ ব্যাংকার অনিয়মিত নিদ্রারোগে ভোগেন, ৪৭ শতাংশ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের চিন্তায় উদগ্রীব থাকেন আর ৪০ শতাংশ ব্যাংকার অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় থাকেন। এছাড়াও, উত্তর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ব্যাংকারদের কারও কারও মধ্যে অনিদ্রা, মাদকাসক্তি, খাবারে অরুচি, বদমেজাজ ইত্যাদির প্রকোপ দেখা যায়। তবে, পশ্চিমা দেশগুলি তাদের গবেষণা থেকে প্রাপ্ত ফলাফলের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন ধরনের আনুসংগিক ব্যবস্থা নিয়েছে। ব্যাংকারদের জন্য উচ্চ বেতন, বিনোদন ছুটি, সামাজিক মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে? না, কিছুই হয়নি। এদেশের ব্যাংকারদের জীবন মানের উন্নয়নে বিশ্ব ব্যাংকের সুপারিশকৃত অনেক সিদ্ধান্ত আজো বাস্তবায়িত হয়নি।

ব্যাংক জবের প্রেশারে মানসিক ও শারিরীক ব্যাধিগ্রস্থ এক ব্যাংকার তার ব্লগ স্ট্যাটাসে লিখেছে-‘আমিতো মানুষ নই। মানুষ গুলো অন্যরকম। হাটতে পারে, বসতে পারে, এ ঘর থেকে ও ঘরে যায়। মানুষ গুলো অন্যরকম। আমি মানুষ নই। মানুষ হলে আমার চোখে মান-অভিমানের রাগ থাকত, ¯েœহ-মায়া-মমতা থাকত, পার্কে-সিনেমায় যাওয়ার মন থাকত, অবসরে বেড়াতে যাবার মানসিকতা থাকতো। আমার কিছুই নেই। আমিতো মানুষ নই। আমিতো কেবল একজন ব্যাংকার।’

বিজনেস স্কুলের ছাত্রদেরকে একটি রচনা লিখতে বলা হয়েছিল। রচনার বিষয়বস্তু-‘ব্যাংকার’। এক ছাত্র (যার বাবা একজন ব্যাংকার) লিখেছে-“ব্যাংকার একটি দু-পেয়ে অতি নিরীহ ভদ্র প্রাণী; যাদের দেখতে হুবহু মানুষের মতো। পার্থক্য শুধু অনুভূতির দিক থেকে। ব্যাংকারদের জগতে একটি কথা প্রচলিত আছে, গন্ডারের মতো চামড়া না হলে আদর্শ ব্যাংকার হওয়া যায় না। পৃথিবীর সব দেশেই এই প্রজাতির দেখা মেলে। এদের মধ্যে বিভিন্ন গোত্র আছে : রাষ্ট্রায়ত্ত, প্রাইভেট, বাণিজ্যিক, বিশেষায়িত ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে প্রত্যেক গোত্রকেই গুচ্ছভাবে বসবাস করতে দেখা যায়। প্রতিটি গুচ্ছের প্রধানকে ম্যানেজার বলা হয়। তবে গুচ্ছ প্রধান হোক আর গুচ্ছের মেম্বারই হোক, সবাই কঠোর নিয়ম-ণীতি এবং বাধা নিষেধ বন্ধী। একটু এদিক সেদিক হলেই ক্যারিয়া এর পরে বহুল পরিচিতকে বলা হয় ক্যাশিয়ার। প্রতিটি অঞ্চলেই ব্যাংকার প্রজাতির মধ্যে একটি সর্দার গোত্র থাকে, যাদেরকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলা হয়। এই গোত্রটি অন্য গোত্রগুলোর ওপর যখন যা খুশি চাপিয়ে দেয়। তবে এই প্রবণতা বাংলাদেশে অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এজন্য বলা হয়, বাংলাদেশের সবচেয়ে নিরীহ প্রাণীর নাম ব্যাংকার। আশার কথা হলো, পৃথিবীর অন্যান্য নিরীহ প্রাণী বিলুপ্তির পথে থাকলেও ব্যাংকার নামক নিরীহ প্রাণীর সংখ্যা বিশেষ করে বাংলাদেশ অঞ্চলে বেড়েই চলছে। শুধু ২০১৩ সালে বাংলাদেশে ১০টি উপগোত্রের উদ্ভব হয়েছে। ব্যাংকারদের বিষয়ে একটি প্রবাদ প্রচলিত আছে - মধ্যরাতে রাস্তায় তিন ধরনের প্রাণী দেখতে পাওয়া যায় : ব্যাংকার, ড্রাংকার আর কুকুর।” 

এসব কথা কাউকে ভয় দেখানোর জন্য না। আমি চাই যারা এ পেশায় আসবেন তারা যেন জেনে-বুঝে আসেন যে, টাই পরলেই ভদ্র চাকুরে হয় না। সম্মান নিয়ে এ চাকুরী করা আসলেই কঠিন। 

অবশেষে একটি কৌতুক দিয়ে শেষ করি- অনলাইনে একজন ২৫ বছরের তরুণী এমন একজন স্বামীর জন্য বিজ্ঞাপন দিয়েছেন যার উপার্জন হতে হবে বছরে ৫ লাখ মার্কিন ডলারের বেশি। সম্পদশালী জীবনসঙ্গী খোঁজার এই অনলাইন বিজ্ঞাপন ঝড় তুলে নিউইয়র্কের নাগরিক সমাজের মৌলিক বিশ্বাসে। এটা কী জীবনসঙ্গী খোঁজা না কি কোনো ব্যবসায়িক সমঝোতা। ওই তরুণী লিখেছে, "নিউইয়র্ক সিটিতে মধ্যবিত্তরাই যেখানে বছরে এক মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে সেখানে আমি খুব বেশি চেয়ে ফেলছি কী!"তরুণীটি নিজেকে অনিন্দ্য সুন্দরী অথচ হালকা ধরনের বলে বর্ণনা করেছেন।

এই বিজ্ঞাপনে সাড়া দিয়ে একজন ব্যাংকার লিখেছেন, "এটা খুবই পাগলাটে ধরনের ব্যবসায়িক সমঝোতা। তোমার সৌন্দর্য ফুরিয়ে আসবে অথচ আমার উপার্জন দিনকে দিন বাড়তেই থাকবে। ব্যাংকের চাকুরী বিধায় খুব স্বাভাবিকভাবেই আমার সম্পদ বাড়ার এক ধরনের নিশ্চয়তা আছে, কিন্তু তুমি তো আর ক্রমশ সুন্দর হয়ে উঠবে না।" ব্যাংকার আরো হিসেবী ভঙ্গিতে লিখেছেন, "অর্থনৈতিক সূত্র অনুযায়ী তুমি খরচশীল সম্পদ আর আমি উপার্জনশীল সম্পদ। তুমি এখন ২৫, আসছে ৫ বছর তুমি সুন্দর থাকবে। কিন্তু তারপর তোমার সৌন্দর্য দ্রুত হ্রাস পাবে। ৩৫ এ ভাবতে পারছো সেই অবস্থাটা কোথায় দাড়াবে? ভালো ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে আমি তোমাকে কিনতে পারি না (তোমারই দেওয়া প্রস্তাবব অনুযায়ী)। সুতরাং 'লিজ' নেওয়াই যুক্তিসঙ্গত হবে।

জবাবে তরুণী লিখেছে-“তুমি ব্যাংকে চাকুরী কর, ভালো বেতন পাও, দিনকে দিন তোমার উপার্জন বাড়বে এটা সত্যি। একবার তুমি ভেবে দেখতো-ব্যাংকিং জবের প্রেশারে দিনকে দিন তুমি অনিদ্রা, খাবারে অরুচি, মাদকাসক্তি, হাই ব্লাড প্রেশার, কিডনী ফেইলোর, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি সমস্যায় আক্্রান্ত হবে। এমনকি আমার প্রতি তোমার আসক্তিও  কমে যাবে। সেটা কি আমার জন্য কষ্টদায়ক নয়? সে কষ্টটা হয়তো তোমার উপার্জনের কারনে আমি মানিয়ে নিতে পারবো। কোথাওতো একটা স্বান্তনা খুজতে হবে আমাকে।”

লেখক: একজন ব্যাংকার




Ripon Abu Hasnat

Author & Editor

Has laoreet percipitur ad. Vide interesset in mei, no his legimus verterem. Et nostrum imperdiet nostrum imperdiet appellantur appellantur usu, mnesarchum referrentur id vim.



0 comments:

Post a Comment

Social Time

Facebook
Like Us
Google Plus
Follow Us
Twitter
Follow Us
Pinterest
Follow Us